নামাজ ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদাত। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ। ফরজ সাধারণত দুই প্রকার। যথা: ১.ফরজে আইন ২.ফরজে কিফায়া । তন্মধ্যে সালাত বা নামাজ ফরজে আইন – এর অন্তর্ভুক্ত। নামায ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।[
সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ তা’য়ালা কোরআন মাজীদে তাঁর বান্দাদের সর্বাধিকবার সালাত কায়িম করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত বলেছেন। যেখানে সলাতের স্থান দ্বিতীয় স্তম্ভের মধ্যে রয়েছে (দেখুন;সহীহুল বুখারীর ৮ নাম্বার হাদীস)।
আর আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক আল-উকাইলী (রাহি.) বলেছেনঃ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কোন সাহাবী সালাত ব্যতিত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফুরী কাজ বলে মনে করতেন না (দেখুন জামে’ঊত তিরমিযীর ২৬২২নাম্বার সহীহ হাদীস)।
যতক্ষণ পর্যন্ত তিনটি শর্ত একই সঙ্গে পাওয়া যাবে না, ততক্ষণ নামাজ ফরজ হবে না।
১। মুসলমান হওয়া। কাফিরের ওপর নামাজ ফরজ নয়। (আল ফিকহুল ইসলামী : ১/৬৩৭)
২। বালেগ তথা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। নাবালেগ সন্তানের ওপর নামাজ ফরজ নয়। (বুখারি : ১৬/৩১৫)
৩। আকল তথা সুস্থ জ্ঞান থাকা। পাগল ও মাতালের ওপর নামাজ ফরজ নয়।
সন্তান যখন সাত বছরের হবে, তখন মা-বাবার উচিত তাদের নামাজ পড়ার হুকুম দেওয়া। ১০ বছরে উপনীত হলে নামাজ ওয়াজিব হওয়ার আগে নামাজে অভ্যস্ত বানানোর জন্য (প্রয়োজনে) তাদের বেত্রাঘাত করা বৈধ। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৮)
নামাজ এর গুরুত্বের ব্যাপারে অসংখ্য রেফারেন্স হয়েছে কুরআন হাদীসে। সেগুলো এখানে আনলে পড়তে ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে তাই আনলামনা।
এবার আসি মূল প্রসংগে,ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি হচ্ছে ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ। কুরবানী দেয়া ফরজ,ওয়াজিব না সুন্নাত?
প্রথম কথা হচ্ছে, কুরবানি ফরজ এ বক্তব্য আলেমদের মধ্যে কেউ দিয়েছেন এ ধরনের কোন বক্তব্য এখনো পাইনি। আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে কোরবানি কি সুন্নাহ নাকি ওয়াজিব, এ নিয়ে।
একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, এটি সুন্নত, সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি অধিকাংশ আলেমের বক্তব্য। আরেকদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, কোরবানি ওয়াজিব। তিন থেকে চারজন ওলামায়ে কেরাম ছাড়া আর কেউ কোরবানিকে ওয়াজিব বলেননি।
শরিয়তে যাঁদের ওপর কোরবানি বাধ্যতামূলক হয় তাঁরা হলেন মুসলিম হওয়া, বিবেকসম্পন্ন হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, এগুলো ঠিক থাকবে।
এর সঙ্গে আর একটি শর্ত যোগ হবে সেটি হলো, যে ব্যক্তি ওই দিন কোরবানির পশু জবাই করার সামর্থ্য রাখে, সেই ব্যক্তির ওপর কোরবানি আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি বলেছেন অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম।
কিন্তু যাঁরা ওয়াজিব বলেছেন, তাঁরা দুটি কঠিন শর্ত দিয়েছেন। একটি হচ্ছে, ওই ব্যক্তির নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে, যেই নেসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয়। অন্যটি হচ্ছে তাঁকে মুসাফির হওয়া যাবে না। এ দুটি শর্ত করে বলা হয়েছে কোরবানি ওয়াজিব।
এ দুটির একটি শর্তও যদি কোনো ব্যক্তি পূরণ করতে না পারে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না।
কিন্তু বিশুদ্ধ বক্তব্য হচ্ছে, রাসুল (সা.) যে হাদিস দিয়ে ওয়াজিবের দলিল দিয়েছেন সেটি। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন কোরবানি করে।’ সামর্থ্যকে রাসুল (সা.) সাধারণ রেখে দিয়েছেন।
অন্য রেওয়াতের মধ্যে এসেছে, ‘সামর্থ্য থাকার পরও যদি সে কোরবানি না করে, তাহলে সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ এই হাদিস দিয়েই ওয়াজিবের দলিল দেওয়া হয়েছে। নবীজি (সা.) নেসাব পরিমাণ সম্পদের কথা মোটেও বলেননি, এটি না থাকলেও চলবে।
কুরবানীর ঈদে ব্যস্ততা বেশী থাকে বিধায় ঈদুল ফিতরের মতো সেটি উদযাপন করতে পারেননা সবাই। তাই কুরবানীর ঈদ এলে নিজেদের কুরবানীর পশুর ছবি ফেসবুক বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়ার একটা ট্রেন্ড গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে মূলত ঈদের আমেজ নিয়ে আসা হয় এবং কয়েকটাদিন একটু মানসিক রিলাক্সে থাকে সবাই। কিন্তু ইদানীয় কিছু মানুষ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন কুরবানীর পশু ফেসবুকে না দেয়ার জন্য। যুক্তি হিসেবে তারা উল্লেখ করেন- যারা কুরবানী দেয়না বা দিতে পারেনা তারা লজ্জা পায়।
তাদের এ যুক্তি কতটা হাস্যকর উপরের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে ক্লিয়ার হয়ে যাবেন সবাই।
নামাজের মত ফরজ ইবাদাত আদায়ের জন্য মুয়াজ্জিন মাইকে সবাইকে ডাকেন। সবার কানে সে ডাক পৌঁছলেও সেটিকে গুরুত্ব ই দেয়না। সে সময় কেউ হয়তো চায়ের দোকানে বসে আড্ডাবাজি করেন , কেউ টিভিতে নাটক ,সিনেমা বা খেলা দেখেন কেউ বিনা কারনে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ান। প্রকাশ্যে সেগুলো করতে কারো ন্যুনতম লজ্জাবোধ হয়না। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে ওয়াজিব বা সুন্নাত হওয়া কুরবানী দিতে না পারায় তাদের লজ্জাবোধ হবে- এর চেয়ে হাস্যকর যুক্তি আর কি হতে পারে। ব্যাপারটা হচ্ছে এ রকম- নামাজ না পড়লে লজ্জা নেই কিন্তু ফেসবুকে কুবানীর পশু দেখলেই সকল লজ্জা তাদের উপর ভর করে।
আসলে এগুলো যারা লিখেন হয়ত তাদের ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য রয়েছে বা তারা না বুঝে এসব করছেন। তাই আমার দৃষ্টিতে ফেসবুকে কুরবানীর পশুর ছবি দেয়া মোটেই অনুচিত নয় বরং এটি ঈদ উদযাপনেরই একটি অংশ বলে আমি মনে করি।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী